ভিটামিন হলো খাদ্যের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার জটিল জৈব রাসায়নিক যৌগ যা জীবদেহে খুব সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয়। আবার এদের উপস্থিতি ছাড়া জীবদেহের শক্তি উৎপাদন ক্রিয়া ব্যাহত হয়, সুষ্ঠু স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্ভব হয় না এবং এই যৌগগুলোর অভাবে বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা যায়। দেহে এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলোর চাহিদা খুব সামান্য। কিন্তু এর কাজকে সামান্য বলা যায় না। কারণ দেহ গঠন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ প্রতিটি কাজই ভিটামিনের উপস্থিতি ছাড়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে না।
ভিটামিনের শ্রেণিবিভাগ
দ্রবণীয়তার উপর ভিত্তি করে ভিটামিনগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন- যে ভিটামিনগুলো চর্বিতে বা চর্বি দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় কিন্তু পানিতে অদ্রবণীয় তাদেরকে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বলে। এই ভিটামিন ৪টি, যথা- এ, ডি, ই এবং কে।
(২) পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন- যে ভিটামিনগুলো পানিতে খুব সহজেই দ্রবীভূত হয় কিন্তু চর্বিতে অদ্রবণীয় তাকে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বলে। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন প্রধানত দুই ধরনের।
যথা-ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও ভিটামিন-সি।
ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স- ভিটামিন 'বি' কোনো একক ভিটামিন নয়। প্রায় ১৫টি বিভিন্ন ভিটামিনকে একসাথে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স বলা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো থায়ামিন বা বি,, রিবোফ্লাভিন বা বিং, ফলিক এসিড।
ভিটামিনের উৎস
প্রাণিজ উৎস- সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, মাংস, যকৃৎ, পনির, দুধ ও দুধজাতীয় খাদ্য।
উদ্ভিজ্জ উৎস- ঢেঁকিছাঁটা চাল, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মিষ্টি আলু, বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক, ধনেপাতা, লেটুস পাতা, বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন- ঢেঁড়স, মাশরুম, পেঁপে, চিচিংগা, লাউ, বেগুন, ধুন্দল, টমেটো, বিট। ওলকপি, ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বরবটি, মুলা, করলা, উচ্ছে, গমের
ভিটামিনসমৃদ্ধ বিভিন্ন খাদ্য
অঙ্কুর, অঙ্কুরিত ছোলা, মটরশুঁটি, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, কাঁচা কাঁঠাল, বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন-আমলকী, পেয়ারা, আমড়া, আতা, সফেদা, গাব, বরই, কুল, জাম্বুরা, বেল, লেবু, পাকা টমেটো, কমলালেবু, কামরাঙ্গা, পাকা পেঁপে, আম, পাকা কাঁঠাল ইত্যাদি।
ভিটামিনের কাজ
অভাবজনিত রোগ- বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের অভাবজনিত রোগ দেখা দেয়।
যেমন-
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাবে বেরিবেরি, মুখে ঘা, ঠোঁটের কোনা ফেটে যাওয়া, পেলেগ্রা চর্মরোগ ও মানসিক বিষাদ, এনিমিয়া রক্তস্বল্পতা ইত্যাদি রোগ দেখা দেয়।
ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ
স্কার্ভি রোগ হয় (দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় ও স্পঞ্জের মতো হয় আর রক্ত পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। |
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ-
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন | অভাবজনিত রোগ |
ভিটামিন- এ | রাতকানা রোগ হয় (রাতের বেলায় অল্প আলোতে দেখতে পায় না)। |
ভিটামিন- ডি | শিশুদের রিকেট হয় (পায়ের হাড় বেঁকে যায় ও মাথার খুলি বড় দেখায়) এবং বড়দের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ (হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায় আর বেঁকে যায়)। |
ভিটামিন- ই | প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। |
কাজ ১- বিভিন্ন ভিটামিনের খাদ্য উৎসের নাম লেখো। |